বেসরকারি তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণ, আধা-নিবিড় চিংড়ি খামার স্থাপন, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও বাড়িঘর তৈরি এবং জলাভূমি ভরাট করার বিরূপ প্রভাব পড়ছে এ এলাকার ফসল উৎপাদনে।
উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, দাকোপে এলপি গ্যাস কোম্পানি রয়েছে তিনটি। আর আধা-নিবিড় (সেমি ইনটেনসিভ) চিংড়ি উৎপাদন খামার রয়েছে ১৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য ফসলের আবাদ জমির পরিমাণ কমেছে বলে জানায় সূত্রটি। তবে কতটুকু কমেছে তার সঠিক পরিমাপ ওই কার্যালয়ে সংরক্ষিত নেই।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে মোট ফসলি জমির পরিমাণ ১ হাজার ৪৫৮ হেক্টর কমেছে। হিসাব মতে, ২০১৫ সালে ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৮০৯ হেক্টর। সর্বশেষ ২০২০ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩৫১ হেক্টরে।
খুলনা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমন চাষ হয় দাকোপে। এ বছর ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। ২০১৬ সালের খরিপ-২ মৌসুমে আমন হয়েছিল ১৯ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে।
কৃষিকাজ থেকে বঞ্চিত খলিশা গ্রামের বাসিন্দা অনিল দাস জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় এলাকার কোনো উন্নয়ন হয়নি। কোম্পানি হয়েছে কিন্তু স্থানীয়দের কর্মসংস্থান হয়নি। কর্তৃপক্ষ বাইরের লোকজন নিয়ে কাজ করছে।
একই গ্রামের বর্গা চাষি প্রশান্ত রায় বলেন, ‘নিজের জমি না থাকলেও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেছি। এখন এলাকাতে বেসরকারি কোম্পানি হওয়ায় ফসলের জমির পরিমাণ কমে গেছে, সাথে কৃষিকাজেরও। কাজ না পাওয়ায় কষ্টে দিন কাটছে। পরিবার নিয়ে কীভাবে দিনযাপন করব সেই শঙ্কায় দিশেহারা।’
অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এতটাই শক্তিশালী যে কোনো ধরনের সরকারি নীতিমালা ছাড়াই কৃজি জমির ব্যবহার ও নদী দখলে নিয়ে গেছে। প্রভাব বিস্তার করে কৃষি জমিতে বালু ভরাট করেছে।
দাকোপ উপজেলার পশুর নদের পাশে চুনকুড়ি গ্রামে এনার্জিপ্যাক-জি গ্যাস কোম্পানি, চালনা পৌরসভার খলিশা গ্রামে বিএমএলপিজি গ্যাস কোম্পানি ও বাণীশান্তার আমতলা গ্রামে গ্রিনটাউন এলপিজি গ্যাস কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে এনার্জিপ্যাক-জি গ্যাসকে পরিবেশ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছিলেন খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
স্থানীয়রা জানান, দাকোপ উপজেলায় যদি কৃষি জমি এমন দ্রুত হারে কমতে থাকে, তাহলে খাদ্যের জোগান দেয়া এক সময় শুধু কষ্টকর নয়, রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বাজুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রঘুনাথ রায় বলেন, ‘কৃষি জমি ব্যবহার করে নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ফলে আবাদের জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
এ ব্যাপারে পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক কুদরত-ই খুদা জানান, সরকারের কৃষি জমি সুরক্ষা আইন অমান্য করে বিভিন্ন বেসরকারি বাণিজ্যিক কোম্পানি কৃষি জমি কিনে অকৃষি কাজে ব্যবহার করছে। যার ফলে এমন জমি হ্রাস পাচ্ছে এবং এতে দেশ খাদ্য নিরাপত্তা সংকটের মুখে পড়বে।
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘শিল্পপ্রতিষ্ঠান, জলাবদ্ধতা ও চিংড়ির হ্যাচারি নির্মাণের কারণে ফসলের আবাদ জমির পরিমাণ পাঁচ বছর আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। পক্ষান্তরে উপকূলীয় এ অঞ্চলে পতিত জমির পরিমাণ বেশি ছিল। এখন ওই সব জমির একাংশ কৃষিকাজে ব্যবহার করছেন কৃষকরা।’